জৈন্তাপুরে প্রধান শিক্ষককে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে আহত ৭
জৈন্তাপুর (সিলেট) প্রতিনিধিঃ জৈন্তাপুরে ছাত্রদের আন্দোলনে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের পর ফের পুনর্বহালকে কেন্দ্র করে ছাত্রদের দু'পক্ষের সংঘর্ষে ২ শিক্ষক সহ ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এদের মধ্যে আহত ৭ জনকে জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে বাউরভাগ উচ্চ বিদ্যালয়ে। আহত ছাত্ররা হলেন বাউরভাগ এলাকার বিভিন্ন গ্রামের ফারুখ আহমেদ এর ছেলে নাহিদ আহমেদ (১০ ম শ্রেনী) একই শ্রেণীর আব্দুর রকিবের ছেলে তামিম আহমেদ, লিয়াকত আলীর ছেলে মাহবুব আহমেদ, মদরিছ আলীর ছেলে জাবেদ আহমেদ, ইসমাইল আলির ছেলে রাজু আহমদ, ও ৯ম শ্রেনীর আলি আহমেদের ছেলে সাজু আহমেদ।
স্হানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৫ই আগষ্টের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক অপসারণের দাবী উঠে ছাত্রদের মাধ্যমে। এরই অংশ হিসেবে গত ২১শে আগস্ট অত্র বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্ররা মিলে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রধান শিক্ষক আব্দুল জলিলের পদত্যাগের দাবীতে মিছিল সহকারে মাঠে অবস্থান নেয়। দীর্ঘ ছয়ঘন্টা অবস্থান শেষে ওইদিন জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়া জেলা প্রশাসকের সভা শেষ করে বাউরভাগ স্কুলে আসেন। পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক আব্দুল জলিলের পদত্যাগ চেয়ে ইউএনও বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। পরবর্তীতে বিদ্যমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে ইউএনও সহকারী প্রধান শিক্ষককে দায়িত্ব দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা প্রদান করেন।
বিবাধমান এই পরিস্থিতিতে ২৩ শে আগষ্ট উপজেলার শালিশী ব্যক্তিত্ব, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, বর্তমান ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান, রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গের উপস্থিতিতে উপজেলার সকল শিক্ষকদের নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
পরে গত ২৭ আগষ্ট শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের একটি পরিপত্রে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু পরিবেশ বজার রাখতে নির্দেশনা ও ৩রা সেপ্টেম্বর অন্য এক পরিপত্রে কোন শিক্ষককে জোরপূর্বক পদত্যাগ ও হেনস্তা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্হা গ্রহনের জন্য জেলা প্রশাসক সহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় জৈন্তাপুরের বিশিষ্ট, সুূধিজন, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্প্রতি সময়ে বিবাধমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে স্হানীয় মুরুব্বিদের সমন্বয়ের উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করে দেয়া হয়।
বাউরবাগ স্কুলের বিদ্যমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে অত্র এলাকার কৃতি সন্তান সিলেট জেলা জজ আদালতের সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট নূরুল হক কে প্রধান উপদেষ্টা করে একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। পরে কয়েকদফা আলোচনা করে স্হানীয় ব্যাক্তিবর্গ, অভিভাবকরা আব্দুল জলিলকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে স্বপদে বহাল রাখার পক্ষে মত দেন। একই দিনে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তাদের ভুল বুজতে পেরে আব্দুল জলিলকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে ফিরে পেতে মত জানায়।
পরে গত ২৩শে সেপ্টেম্বর স্হানীয় এলাকাবাসী আব্দুল জলিলকে পুনর্বহাল করতে নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন এবং ২৫শে সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীরা অনাড়ম্বর এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের প্রধান শিক্ষককে কেক কাটার মধ্যদিয়ে বরণ করে নেয়।
অপরদিকে অন্য একটি পক্ষ আব্দুল জলিলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে পুনর্বহাল থাকাকে মেনে নিতে পারে নি। তাদের দাবী আহবায়ক কমিটি তাদের না জানিয়ে ও মতামতের প্রধান্য না দিয়ে প্রধান শিক্ষককে পুনরায় স্বপদে বহাল করেছেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবাদ সরূপ গত ২৬শে সেপ্টেম্বর বাউরভাগ ছাত্র কল্যাণ পরিষদ ও প্রাক্তণ ছাত্ররা মিলে প্রধান শিক্ষক আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে নানান অনিয়মের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করে। পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক হিসেবে আব্দুল জলিলকে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্হিতি অবনতির আশঙ্কায় দ্রূত অপসারণের দাবীতে জৈন্তাপুরের দরবস্ত সেনাক্যাম্পে একটি স্মারকলিপি জমা দেন তারা। পরবর্তীতে সেনা কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া ও পরবর্তী নির্দেশনা প্রদান না হওয়া পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল জলিলকে বিদ্যালয়ে না যেতে পরামর্শ প্রদান করেন।
ঘটনার দিন রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান শিক্ষক আব্দুল জলিল বিদ্যালয়ে উপস্থিত না হওয়ায় তার পক্ষের ছাত্ররা মিছিল শুরু করে। তারা দাবী করেন পুনরায় তাদের শিক্ষকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। পরে বিদ্যালয়ের সহকারী এক শিক্ষক বিষয়টি ইউএনও বরাবরে অবগত করলে তিনি সোমবার সেই ছাত্রদের কয়েকজন প্রতিনিধিকে তার দপ্তরে আসার কথা বলেন এবং স্কুল পরবর্তী নির্দেশনা না পর্যন্ত বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।
এমতাবস্থায় সকাল সাড়ে ১১টায় প্রধান শিক্ষকের পক্ষ নেয়া ছাত্রদের সাথে বিপক্ষে থাকা ছাত্ররা সংঘর্ষে জড়ায় এতে দুই শিক্ষক সহ অন্তত ১০ আহত হলে ৭ জনকে জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়।
এ বিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেছেন, উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে স্কুল ছুটি ঘোষণা করার পরও ছাত্রদের সংঘাতে জড়ানো দুঃখজনক। তিনি বলেন প্রধান শিক্ষক আব্দুল জলিলকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তার বিষয়ে পরবর্তীতে নির্দেশনা আসবে। আহত শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে দেখতে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে প্রতিনিধি প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে সর্বশেষ খবরে জানা গেছে আগামীকাল সোমবার দুপুর ২টায় আহত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের নিয়ে নিজ দপ্তরে জরুরী বৈঠক ডেকেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়া। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জৈন্তাপুর উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজার আজিজুল হক খোকন।